বৈজ্ঞানিক অনুন্ধানের সাতটি স্তর : Seven steps of Scientific Investigation

Spread the love

বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান বলতে বোঝায় ঘটে যাওয়া কোন ঘটনার যাচাইযোগ্য প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যার অন্বেষণ। “বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান” এই নামকরণ থেকে মনে হতে পারে যে, এই অনুসন্ধানে যেন শুধু বৈজ্ঞানিকরাই ব্রতী। কিন্তু এ ধারণা ভুল।

যে কোন সাধারণ মানুষ তার ব্যবহারিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিজ্ঞানসম্মতভাবে যাচাইযোগ্য কোন প্রকল্প গঠন করে তার যথার্থতা প্রমাণে সচেষ্ট হতে পারে। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের কোন নির্দিষ্ট গতিপথ নেই।

তবে, বিশেষভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিম্নোক্ত সাতটি স্তর বা পর্ব বিদ্যমান :

i) সমস্যা ও তার উপলব্ধি ii) প্রাথমিক প্রকল্প প্রণয়ন

iii) অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ

(iv) সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রকল্প প্রণয়ন

(v) অনুকল্প অবরোহন

(vi) যাচাইকরণ

(vii) সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার প্রয়োগ

পর্বগুলি আলোচনা করা যাক :

i) সমস্যা ও তার উপলব্ধি : কোন সমস্যা দেখা দিলে তবেই তার সমাধানের কথা ভারা হয়, অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হওয়া যায়। দৈনন্দিন জীবনে অনেক ঘটনাই ঘটে।

তাদের মধ্যে যেটিকে অসাধারণ বা অস্বাভাবিক বলে মনে হয়, সেক্ষেত্রেই প্রশ্ন ওঠে। ঘটনাটি কেন ঘটল? স্বাভাবিক নিয়মে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা আমাদের কাছে সমস্যা হিসেবে হাজির হয় না। যেখানেই অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়, সেখানেই সমস্যার উদ্ভব হয়। এমন হতে পারে যে, সমস্যা আছে। কিন্তু আমরা সমস্যাটি সম্পর্কে অবহিত নই।

সেক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের তাগিদ থাকে না। এই তাগিদ উৎপন্ন হয় সমস্যা ও তার উপলব্ধি থেকে। সে কারণেই সমস্যা ও তার উপলব্ধিকে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের প্রথম পর্ব বলা হয়েছে।

এই তত্ত্ব মাথায় রেখে আমরা এলোমেলোভাবে না এগিয়ে ঘটনাটির সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে একটি আনুমানিক ধারণা বা প্রাথমিক প্রকল্প গঠন করি।

(ii) প্রাথমিক প্রকল্প প্রণয়ন: বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের দ্বিতীয় পর্ব হিসেবে আনুমানিক ধারণা গঠন বা প্রাথমিক প্রকল্প প্রণয়নের কথা বলা হয়। বলা বাহুল্য, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে “কেন”? প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়। যে ঘটনার কারণ আমরা জানি না, সেক্ষেত্রেই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হ’য়ে আমরা ঘটনাটি কেন ঘটল তার উত্তর খুঁজতে সচেষ্ট হই। কারণ ছাড়া কোন ঘটনা ঘটতে পারে না –

iii) অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ: বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের দ্বিতীয় পর্বে যে প্রাথমিক প্রকল্প গঠন করা হয়, তার ভিত্তিতে অবশ্যই কিছু তথ্য থাকে। এখন, এই প্রকল্পটির সত্যতা যাচাই-এর জন্য আরও কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যেগুলি আলোচ্য ঘটনার সঙ্গে প্রাসঙ্গিকভাবে যুক্ত।

সংগৃহীত অতিরিক্ত তথ্য এই প্রকল্পটিকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে; কিংবা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রকল্প গঠনে আমাদেরকে প্রবৃত্ত করতে পারে।

নূতন প্রকল্প গঠন বা গঠিত প্রাথমিক প্রকল্পের যাথার্থ্যের জন্য অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব।

iv) সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রকল্প প্রণয়ন :

অতিরিক্ত তথ্য সংগৃহীত হওয়ার পর যদি দেখা যায় যে, প্রথম প্রকল্পটি সঠিক নয়, অর্থাৎ এই তথ্যগুলি প্রাথমিক প্রকল্পের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।

তাহলে এই সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের নূতন প্রকল্প প্রণয়ন করতে হবে। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে লিপ্ত ব্যক্তিই প্রকল্প বা আনুমানিক ধারণা গঠন করে; কিন্তু এই আনুমানিক ধারণা গঠন যে একান্তভাবে ব্যক্তিগত ব্যাপার নয় তা বোঝা যায় এই চতুর্থ পর্ব থেকে।

যেখানে বলা হয় যে, প্রকল্প প্রণয়ন বা আনুমানিক ধারণা গঠন হ’ল তথ্যভিত্তিক। নতুন প্রকল্পটি কি হবে তা নির্ভর করে সংগৃহীত তথ্যের ওপর।

v) অনুকল্প অবরোহণ :

সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে যে নূতন প্রকল্পটি গঠন করা হয়। সেই প্রকল্প থেকে আমরা যাচাইযোগ্য কিছু অনুকল্প পেয়ে থাকি। এই অনুকল্পগুলি নিষ্কাশনের উদ্দেশ্য এই যে, যাচাইকরণের মাধ্যমে যদি দেখা যায় যে, অনুকল্পগুলি সত্য, তাহলে তাদের সত্যতা থেকে আমরা প্রকল্পটির সত্যতা দাবী করতে পারি।

vi) যাচাইকরণ :

বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের এই পর্বে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে গঠিত নূতন প্রকল্প থেকে নিঃসৃত অনুকল্পগুলিকে যাচাই করা হয়। অনুকল্প যাচাইকরণের অর্থ পর্যবেক্ষণ পরীক্ষণের সাহায্যে অনুকূল্পের সত্যতা মিথ্যাত্ব নির্ধারণ।

এই প্রক্রিয়াকে প্রকল্পের যাচাইকরণও বলা যায়; তবে, এইভাবে প্রকল্পের যাচাইকরণকে সাক্ষাৎ বা প্রত্যক্ষভাবে যাচাইকরণ না ব’লে বলা হয় পরোক্ষভাবে যাচাইকরণ।

যাইহোক, যাচাইকরণের মাধ্যমে যদি দেখা যায় যে, অনুকল্পটি সত্য, তাহলে প্রকল্পটি সমর্থিত হয়; আর যদি দেখা যায় যে, অনুকল্পটি মিথ্যা, তাহলে প্রকল্পটিকে বর্জন ক’রে পুনরায় অপর একটি স্বতন্ত্র প্রকল্প গঠন করতে হয়।

(vii) সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার প্রয়োগ :

অনুকল্প যাচাই করে যদি দেখা যায় যে, অনুকল্পটি সত্য, তাহলে প্রকল্পটি সমর্থিত হয়। প্রকল্পটি সমর্থিত হ’লে সেই মর্মে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ধরা যাক, ঘটনাটি হ’ল ক।

একাধিক তথ্য সংগ্রহ করে খ নামক একটি প্রকল্প গঠন করা হ’ল; এবং খ থেকে নিঃসৃত অনুকল্প সত্য হওয়ায় খ সমর্থিত

হ’ল। তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি যে, যেহেতু খ সেহেতু ক। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের এই শেষ পর্বে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেটিকে প্রয়োগ করে দেখিয়ে দিতে হয়। অর্থাৎ, শুধুমাত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেই চলবে না; সিদ্ধান্তটিকে প্রয়োগ করে দেখিয়ে দিতে হবে যে, খ-এর জন্যই ক ঘটেছে।

বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা থেকে একাধিক বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের দৃষ্টাত্ত উপস্থাপিত ক’রে আমরা দেখাতে পারি যে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলোচিত সাতটি স্তর বা পর্ব অনুসরণ করা হয়।

এমনকি, বাস্তবে ঘটে যাওয়া কোন আপাত দৃষ্টিতে রহস্যজনক ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে প্রবৃত্ত কোন রহস্য সন্ধানী গোয়েন্দাও সুশৃঙ্খলভাবে সপ্ত কাণ্ড বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন।

About Surajit Sajjan 59 Articles
Surajit Sajjan M.A B.Ed Assistant Teacher (HS School)

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*