Phenomenology
সমসাময়িক পাশ্চাত্য দর্শনের যে কয়েকটি ধারা প্রবাহমান তাদের মধ্যে অন্যতম হলো প্রভাসতত্ত্ব (Phenomenology ) কোন কোন ব্যাখ্যাকার প্রভাসতত্ত্ব ও তার দ্বারা প্রভাবিত পাশ্চাত্য দর্শনের যে ধারা তাকে কন্টিনেন্টাল ফিলোজফি হিসাবে বুঝতে চান।
যদিও কন্টিনেন্টাল অভিধাটি ভৌগলিক ধারণা তথাপি পাশ্চাত্য দর্শনের জগতে ‘Continental Philosophy’কে অপর এক ধারা “Analytic Philosophy”র বিপরীতে রেখে বুঝতেহবে। তবে একথা অনেকাংশে সত্য যে
প্রভাসতত্ত্ব(Phenomenology),অস্তিবাদ(Existentialism ),ভাষ্যতত্ত্ব(Hermeneutics ), বিনির্মাণ (Deconstruction) প্রভৃতি দর্শন এর জন্মস্থান ইউরোপে। তবে পরবর্তী পর্যায়ে দর্শনের এই ধারাগুলি সার্বত্ৰিক চরিত্র লাভ করেছে।
যাই হোক প্রভাসতত্ত্ব বলে ইউরোপীয় বা পাশ্চাত্য দর্শনের যে ধারা প্রবাহমান তা প্রধানত জার্মান দার্শনিক Edmund Husserl এর দার্শনিক অনুসন্ধানের উপর প্রতিষ্ঠিত। যদিও প্রভাস তত্ত্বের আলোচনা প্রসঙ্গে হুসার্ল এর দু এক জন পূর্বসূরীর কথা বলা হয়, তথাপি হুসার্লের দার্শনিক অনুসন্ধান এর মধ্যে দিয়েই প্রভাসতত্ত্ব একটি পূর্ণাঙ্গ দার্শনিক মতবাদ রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে।
প্রভাসতত্ত্ব কি ধরনের দর্শন?
প্রথমেই জিজ্ঞাসা হয় প্রভাসতত্ত্ব কি ধরনের দর্শন? প্রভাস তত্ত্বের স্বরূপ নিরূপণ করা যেতে পারে বিভিন্ন দিক থেকে। আমরা প্রথমে এর বুৎপত্তিগত অর্থ অনুসরণ করব।
বুৎপত্তিগত অর্থে প্রভাষতত্ত্ব বলতে সেই ধরনের দর্শন কে বোঝায় যা আমাদের সামনে প্রকাশমান যে প্রভাস ফেনোমেনা(phenomena ) তার সম্পর্কে সুসংবদ্ধ অনুসন্ধান করে।
এখানে প্রভাসতত্ত্বের বিষয় কে স্বরূপতঃ সত্তা অর্থ বুঝতে হবে। প্রভাস তত্ত্বের মূল প্রবক্তা এডমন্ড হুসার্ল প্রভাষতত্ত্বকে পদ্ধতি তত্ত্বগত দর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।
Phenomenology শব্দের উৎপত্তি
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ফেনোমেনা বা ফেনোমেনোলজি শব্দটি দর্শনের ইতিহাসে একেবারে নতুন নয়। এর শিকড় বা মূল রয়েছে গ্রীক দর্শনে।
“Phenomenan” শব্দটি গ্রিক শব্দ “Phainomenon” শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ ‘প্রকাশ’ এর জার্মান প্রতিশব্দ অর্থে Phenomenology র অর্থ দাঁড়ায় সত্ত্বার বিপরীতে যা প্রকাশিত অর্থাৎ অবভাস সম্পর্কিত শাস্ত্র। এই অর্থ আমাদেরকে প্লেটোর গুহাতত্ত্ব (Theory of Cave )এর কথা মনে পড়িয়ে দেয়।
স্পষ্টতঃই গ্রীক দর্শনের অর্থটি স্বরূপতঃ সত্তা হিসেবে গৃহীত হয়নি। হুসার্ল কিন্তু Phenomenan শব্দ কে স্বরূপতঃ সত্ত্বা অর্থেই বুঝেছেন। উল্লেখ্য যে আধুনিক দর্শনেও শব্দটি তার অপকৃষ্টতার গ্লানি হতে মুক্ত হতে পারেনি। আমরা কান্টের দর্শন এর কথা উল্লেখ করতে পারি যেখানে তিনি Phenomenan কে Noumenon এর বিপরীতে ব্যবহার করেছেন।
কান্ট্ ইন্দ্রিয়-উপাত্ত (Sense-data) এর প্রকার সমন্বিত জ্ঞানীয় অবস্থাকে Phenomenan বলতে চেয়েছেন। আর এই Phenomenan এর ভিত্তি হিসেবে Noumenon কে স্বীকার করে নিয়েছেন।
কান্টের সমসাময়িক দার্শনিক এই H.Lambert তাঁর গ্রন্থে কথাটি ব্যবহার করেছেন যেখানে ফেনোমেনোলজি বলতে থিওরি অফ ইল্যুশন কি বুঝিয়েছেন। পরবর্তী পর্যায়ে হেগেল তার গ্রন্থের প্রধান শিরোনামেই এই ফেনোমেনোলজি কথাটি ব্যবহার করেছেন যেখানে তা সত্তাতাত্ত্বিক ব্যঞ্জনা লাভ করেছে।
চেতনার বিবর্তনের যে ক্রমপর্যায় তার একটি স্তর কে বোঝাতে গিয়ে হেগেল ফেনোমেনন শব্দটি ব্যবহার করেছেন। স্পষ্টতঃই পরমসত্ত্বার তুলনায় ফেনোমেনানা আংশিক সত্তা।
হুসার্ল এর শিক্ষক ব্রেন্টানো
ফেনোমেনোলজি বলতে বর্ণনাত্মক মনস্তত্ত্ব(Descriptive Psychology ) কে বুঝিয়েছেন ব্রেনটানো।হুসার্লই মনস্তত্ত্ব বাদের প্রভাব থেকে ফেনোমেনোলজি কে মুক্ত করেন। তিনি ফেনোমেনোলজি কে পূর্ণ জ্ঞানতাত্ত্বিক অর্থে প্রয়োগ করেন।হুসার্লের মতে ফেনোমেনন হল তাই যা আমাদের অভিজ্ঞতায় ধরা দেয়। উত্তম পুরুষের চেতনার সামনে উদ্ভাসিত যে স্বরূপ সত্তা,তার মৌলিক অবয়ব নিরূপণের জন্য হুসার্ল মনোযোগী হয়েছেন।
ফেনোমেনোলজি হল তাই যা আমাদের সামনে প্রদত্ত বিষয়ে। আরো স্পষ্ট করে বললেপ্রভাষতত্ত্ব বা অবভাসতত্ত্ব আমাদের বিষয়মুখী চেতনার সুসংবদ্ধ অনুসন্ধানে নিয়োজিত। তিনি “Logical Investigation” গ্রন্থে Phenomenon শব্দটিকে ‘Objective intentional content of subjective acts of consciousness ‘অর্থে গ্রহণ করেছেন।
এই পর্যায়ে হুসার্লের প্রভাষতত্ত্ব কে আমরা বর্ণনাত্মক প্রভাষতত্ত্ব Descriptive Phenomenology বলে থাকি।পরবর্তী পর্যায়ে প্রভাসতাত্ত্বিক বন্ধনীকরণ তথা রূপান্তরকরণ পদ্ধতি আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে (ফেনোমেনোলজিক্যাল রিডাকশন) তা বিশ্লেষণ এর অন্য একটি পর্যায়ে বিবর্তিত হল। যাকে তিনি অধিজাগতিক প্রভাষতত্ত্ব (Transcendental Phenomenology)বলেছেন।
আর একই সঙ্গে তার সারধর্মগত রূপান্তরকরণ আমাদেরকে বৈচিত্রময় বিশেষের আপতিকতা থেকে আবশ্যিক সারধর্মে উন্নীত করে। এইসব রূপান্তর বা বন্ধনীকরণের মাধ্যমে হুসার্ল সত্তা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের বিশ্বাস বা পূর্বস্বীকৃতি থেকে আমাদেরকে মুক্ত করতে চেয়েছেন।হুসার্লের এই আদর্শ দার্শনিক অবস্থানের সূচনাকারী গ্রন্থ “Ideas I” এ তিনি প্রভাষতত্ত্ব কে সংজ্ঞায়িত করেছেন এইভাবে:-
“The science of the essence of consciousness centred round the defining trait of intentionality, approached explicitly in the first person.”
সুতরাং উপরের আলোচনার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে প্রভাসতত্ত্ব সেই পদ্ধতিতত্ত্ব তথা দর্শন যা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিষয়ের অনুসন্ধান করতে চায়। হুসার্ল এর মতে আমাদের বিষয়মুখী চেতনার অবয়বকে উদঘাটন করা এবং সমুদায় জাগতিকতার অর্থ বিশুদ্ধ অধি জাগতিক বিষয়ীর অভিলাষের মধ্যে দিয়ে নিরূপিত হয়। এই পদ্ধতি তত্ত্বের নামই প্রভাসতত্ত্ব।
ফেনোমেনোলজিক্যাল মুভমেন্ট
অধ্যাপক Herbert Speigelberg প্রভাসতত্ত্ব কে চিন্তাজগতের এক আন্দোলন,তার ভাষায় ফেনোমেনোলজিক্যাল মুভমেন্ট বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে সাবেকি অর্থে প্রভাসতত্ত্ব কোন দর্শন তন্ত্র বা তত্ত্ব নয়। এটি পদ্ধতিগত দিক দর্শন বা আন্দোলন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ‘প্রভাসতাত্ত্বিক আন্দোলন’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন হুসার্লের একনিষ্ঠ গুনগ্রাহী ছাত্র Johaness Doubert যিনি হুসার্লের প্রথম প্রভাস তাত্ত্বিক অনুসন্ধান “লজিক্যাল ইনভেস্টিগেশন” গ্রন্থটিকে জীবনবেদ হিসেবে গ্রহণ করেন। যাইহোক অধ্যাপক স্পিগেলবের্গ প্রভাসতত্ত্ব কে জ্ঞান বিজ্ঞানের জগতে একটি আন্দোলন রূপে চিহ্নিত করার সমর্থনে নিম্নরূপ যুক্তি উপস্থাপন করেছেন:-
প্রথমত:
প্রথমত: প্রভাসতত্ত্ব কোনো স্থবির দর্শন তন্ত্র নয়। এটি একটি গতিশীল পদ্ধতিতত্ত্ব,যার অগ্রগমন একদিকে যেমন নিজস্ব নিয়ম-নীতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তেমনি আলোচ্য বিষয় বা অনুসন্ধান ক্ষেত্রের প্রকৃতির দ্বারাও নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে পূর্বনির্দিষ্ট কয়েকটি প্রত্যয় তথা নিয়ম-নীতির দ্বারা সংবদ্ধ যে দর্শন তন্ত্র তা যাবতীয় বিষয়কে কয়েকটি নিয়ম-নীতির দ্বারাই ব্যাখ্যা করে,যেখানে প্রভাসতত্ত্ব অনুসন্ধান ক্ষেত্রের প্রকৃতির দ্বারাও অনেকখানি নিয়ন্ত্রিত হয়। অবশ্য এখানে প্রভাসতত্ত্ব কে ব্যাপক অর্থে বুঝতে হবে।
দ্বিতীয় :
দ্বিতীয় : প্রথাগত সাবেকি দর্শন তন্ত্রে কোন একজন দার্শনিক কিছু তত্ত্বের সূচনা করেন এবং তার অনুগামীরা সেই তত্ত্ব তথা নিয়ম-নীতির দ্বারা সম্পূর্ণভাবে পরিচালিত হয়। কিন্তু প্রভাসতত্ত্বের যদিও এক নিজস্ব বিচারধারা আছে তথাপি বিষয় বৈচিত্র্যের কারণে এর গতিমুখ প্রয়োজন অনুসারে কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে থাকে। সাধারণভাবে বলা যায় যে প্রভাসতত্ত্ব যেন এক বিশাল নদী প্রবাহ, যা অনেক সমন্তরাল প্রবাহের এক সমন্বিত রূপ, যার অনেক শাখা নদী ও উপনদী আছে।
তৃতীয়তঃ
তৃতীয়তঃ প্রভাস তত্ত্বের যদিও এক সাধারণ প্রারম্ভ ভূমি আছে, তথাপি এর একটি মাত্রই পূর্বনির্দিষ্ট গন্তব্য আছে এরকম নয়। অর্থাৎ প্রভাস তাত্ত্বিক অনুসন্ধান শুরুতে কিছু নিয়ম-নীতি দ্বারা পরিচালিত হলেও কোথায় শেষ হবে তার সবটুকুই পূর্বনির্দিষ্ট নয়। বিষয় বৈচিত্র্যের কারণে প্রভাসতত্ত্ব কে মুক্তমনা হতে হয়।
বলাবাহুল্য প্রভাসতত্ত্ব এর উক্তরূপে, ব্যাপক অর্থ বা উদার সংজ্ঞা গ্রহণ করলে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই বিষয়টিকে সামনে রেখে অধ্যাপক স্পিগেলবার্গ কে অনুসরণ করে আমরা প্রভাসতত্ত্বের নিম্নরূপ কয়েকটি অর্থের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি।
বিস্তৃত তম অর্থে প্রভাস তত্ত্ব(Phenomenology in the widest sense):
বিস্তৃত তম অর্থে প্রভাস তত্ত্ব(Phenomenology in the widest sense): যেসব দার্শনিক বা গবেষক প্রত্যক্ষ অনুভব(direct intuition)কে যাবতীয় সত্যের মানদন্ড ও উৎস হিসাবে স্বীকার করেন।সারধর্মের সম্ভাবনা তথা সারধর্মের জ্ঞান স্বীকার করেন। এবং প্রভাস তত্ত্বের অন্তর্নিহিত নিয়ম নীতি সম্পর্কে সচেতন থেকে বিষয় অনুসন্ধানে প্রয়াসী হন। তাদেরকে আমরা বিস্তৃত তম অর্থে প্রভাস তাত্ত্বিক বলতে পারি।
বিস্তৃতি অর্থে প্রভাস তত্ত্ব(Phenomenology in the broad sense):
বিস্তৃতি অর্থে প্রভাস তত্ত্বের নিজস্ব নিয়ম নীতি অনুসারে অনুসন্ধানকারী যখন প্রভাসের অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হন, প্রভাসের বিষয়গত ও বিষয়ীগত উভয় দিকের প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগ দেন। এবং তার মধ্যে দিয়ে বিষয়সমূহকে বোঝার চেষ্টা করেন তাদেরকে আমরা বিস্তৃত অর্থে প্রভাস তাত্ত্বিক বলবো। বস্তুতপক্ষে হুসার্ল তার কয়েকজন সমভাবাপন্ন দার্শনিকের সঙ্গে একত্রে 1913 খ্রিস্টাব্দে “ইয়ার বুক ফর ফিলোসফি এন্ড ফেনোমেনোলজিক্যাল রিসার্চ ” এ যে স্বাক্ষরিত বিবৃতি প্রকাশ করেন। তার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা যে মঞ্চ, তাদের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বিস্তৃত অর্থে প্রভাসতত্ত্ব হিসাবে বুঝতে হবে। গাইগার , আলেকজান্ডার প্রমূখ দার্শনিকদের সঙ্গে যে বিবৃতি স্বাক্ষর করেন তা নিম্নরূপ-
“What units them is the common Conviction that it is only by a return to the primary sources of direct intuition and to insights into essential structure derived from them that we shall be able to put to use the great traditions of Philosophy with their concepts and problems ;Only thus shall we be in a position to clarify such concepts intuitively to restore the problems on an intuitive basis and thus ,eventually to solve them ,at least in principle.”
বলাবাহুল্য বিস্তৃতম অর্থে প্রভাস তত্ত্বের সঙ্গে বিস্তৃত অর্থে প্রভাস তত্ত্বের খুব বেশি তফাৎ নেই। তবে হুসার্ল এবং তার অনুগামীরা প্রভাষতত্ত্ব কে সামগ্রিকভাবে দর্শন অনুসন্ধানের পদ্ধতি হিসাবে গড়ে তোলার ইঙ্গিত দিয়েছেন,যা প্রথমোক্ত অর্থে স্পষ্ট নয়।
কঠোর অর্থে প্রভাসতত্ত্ব (Phenomenology in the strict sense)
কঠোর অর্থে প্রভাসতত্ত্ব যেসব গবেষক তথা চিন্তাবিদ প্রত্যক্ষভাবেই সত্যতার প্রাথমিক উৎস ও মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করেন, সারধর্মের সম্ভাবনা স্বীকার করেন এবং একই সঙ্গে অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে জ্ঞাতা বা বিষয়ীর সৃজনশীল ভূমিকার প্রতি যথোপযুক্ত মনোযোগ দিয়ে থাকেন ,তাদের পদ্ধতিতত্ত্ব কঠোর অর্থে প্রভাস তত্ত্ব বলে পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে বর্ণনামূলক প্রভাস তত্ত্ব বলতে যা বোঝায় বা সাধারণভাবে প্রভাস তত্ত্ব বলতে যা বোঝায় তাকে এই অর্থে বুঝতে হবে। এখানে বিষয়াভিমুখী চেতনার বিশ্লেষণ ,একাধারে বিষয়ীগত ও বিষয়গত দিক (Noetic and Noematic) উভয়দিকের বিশ্লেষণ করা হয়।
কঠোরতম অর্থে প্রভাসতত্ত্ব (Phenomenology in the strictest sense)
কঠোর অর্থে প্রভাস তত্ত্বের যে পরিচয় উপরে দেওয়া হলো তার সঙ্গে যখন প্রভাসতাত্ত্বিক বন্ধনীকরণ বা অধি জাগতিক রূপান্তরকরণ(Phenomenological or Transcendental reduction ) পদ্ধতি যুক্ত হয় তখন যে প্রভাস তত্ত্বের সূচনা হয় তাকে অধ্যাপক স্পিগেলবের্গ কঠোরতম অর্থে প্রভাসতত্ত্ব বলেছেন। বলাবাহুল্য প্রভাস তত্ত্বের কেন্দ্রীয় প্রবক্তা হুসার্লের প্রভাসতাত্ত্বিক দর্শন এই কঠোরতম অর্থেই প্রভাসতত্ত্ব।
হুসার্ল আমাদের প্রত্যক্ষানুভবকে জ্ঞানের প্রাথমিক উৎস হিসাবে গ্রহণ করেছেন। বৈচিত্রময় বিশেষের আপতিকতাকে অতিক্রম করে সাধারণ সারধর্মের গ্রহণ স্বীকার করেছেন,আমাদের বিষয়াভিমুখী অভিজ্ঞতার পূর্ণ অবয়ব উদ্ঘাটন করেছেন এবং একইসঙ্গে বিষয়ের সঙ্গে অনুপ্রবিষ্ট অথচ বিষয়ের অংশ নয় এইরূপ যাবতীয় সংস্কার তথা পূর্বস্বীকৃতিকে বন্ধনীকরণের মাধ্যমে ও তার থেকে প্রকাশিত বিশুদ্ধ অধিজাগতিক চেতনার আলোকে সত্তার অনুসন্ধানের জন্য প্রস্তাব করেছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি জাগতিকতার সমুদয় অর্থ, অন্য ভাষায় বিষয়ের মূল্য বা অর্থকে অধিজাগতিক গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন।
অনুসিদ্ধান্ত
পরিশেষে বলা যায় যে,প্রভাসতত্ত্ব একাধারে আমুল অনুসন্ধানের উপযুক্ত পদ্ধতির সূচনা করেছে ,তেমনি মানব চেতনা প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটন করে এক সম্যক চেতনা-দর্শনের সন্ধান দিয়েছে। যাবতীয় সংস্কারকে পাশে সরিয়ে রেখে বিষয়ের প্রকৃত স্বরূপ বা প্রভাসের অবয়বকে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছে এই প্রভাসতত্ত্ব। এইভাবে চরম স্বীকৃতি শূন্যতার আদর্শ এবং বৈজ্ঞানিক কঠোরতার আদর্শ কে দর্শনের জগতে আমদানি করতে প্রয়াসী হয়েছেন হুসার্ল। তাঁর এই উদ্যোগ কতখানি সফল হয়েছে তা বিবেচনা সাপেক্ষে। তবে হুসার্ল এর এই প্রভাসতাত্ত্বিক পদ্ধতিতত্ত্ব সমকালীন চিন্তার জগৎকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
ফেনোমেনোলজি আরও বিস্তৃত ব্যাখ্যার দাবী রাখে ।