Karl Marks কাল্পনিক সমাজতন্ত্র ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র

Spread the love

কাল্পনিক সমাজতন্ত্র বলতে কি বোঝো? কয়েকজন কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের নাম লেখ। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের সাথে এই মতের পার্থক্য কি?

সেন্ট সাইমনস চার্লস ফুরিয়ে এবং ইংল্যান্ডের রবার্ট ওয়েন

গণতান্ত্রিক যুগে অর্থনৈতিক অন্তবিরোধের ফলে প্রকৃত সমাজতন্ত্রের উৎপত্তি হতে পারে। উনিশ শতকের গোড়ার প্রথমদিকে এইরূপ একটি সমাজতান্ত্রিক চিন্তার আলোচনা হয়। সমস্ত মানুষের মধ্যে আর্থিক সাম্য আনার সংকল্প মানুষের মধ্যে প্রবল ভাবে জেগে ওঠে। এই নতুন আদর্শকে কেন্দ্র করে যে সমাজতন্ত্র আত্মপ্রকাশ করে তাই কাল্পনিক সমাজতন্ত্র নামে পরিচিত।

ফরাসি চিন্তাবিদ সেন্ট সাইমনস চার্লস ফুরিয়ে এবং ইংল্যান্ডের রবার্ট ওয়েন তিনজন হলেন কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক।
আমরা সংক্ষেপে কাল্পনিক সমাজতন্ত্র বাদের চিন্তা অনুসরণে কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের কয়েকটি বিশেষ দিক নিয়ে আলোচনা করছি-

কাল্পনিক সমাজতন্ত্র

সেন্ট সাইমনসের মতে প্রকৃতি ও মানব সমাজের একটি দৃঢ় সম্পর্ক বর্তমান। প্রকৃতির সাথে মানুষের শ্রমের সম্পর্ক স্থাপনের ফলে যে উৎপাদন প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয় সেটিই হয়ে দাঁড়ায় সামাজিক অগ্রগতি এবং সমাজ ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। তিনি আরো মনে করেন সমাজব্যবস্থার সুস্থ বিন্যাসের জন্য প্রকৃতিকে করায়ত্ত করে তাকে সমাজের প্রয়োজনে নিয়োগ করা প্রয়োজন।

সেই সমাজ ব্যবস্থার যথার্থতা মানুষকে তার বিকাশ সাধনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রকৃত স্বাধীনতা দেয়। মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্ব বিস্তার অগ্রগতি ও স্বাধীনতার পরিপন্থী সমাজের সকল মানুষের সঙ্গ বদ্ধ প্রচেষ্টার ফলেই প্রকৃতির ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়।
সেন্ট সাইমনস যে কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের বীজ বপন করেছিলেন সেই আদর্শকে একটি নতুন স্তরে উন্নীত করেন ফুরিয়ে। কিন্তু ফুরিয়ের চিন্তাধারার মধ্যে কিছু অসংগতি ছিল। ফুরিয়ের মতে শিল্পের প্রগতি সমাজের পক্ষে অভিশাপ। তিনি মনে করেন শিল্প বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতেই পুঁজিবাদের শোষণ ভিত্তিক চরিত্রটি অত্যন্ত নগ্নভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

তাই যন্ত্র সভ্যতার বিকাশের মধ্যে দিয়ে কোন ইতিহাস রচিত হবার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু ফুরিয়ে এই চিন্তার কোন বাস্তব ভিত্তি ছিল না তাই তার সমাজতন্ত্র কল্পনার স্তরেই রয়ে গেল।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে বৃটেনের কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন রবার্ট ওয়েন। তিনি মনে করেন সামাজিক পরিবেশের প্রভাবে মানুষের চরিত্রের বিকাশ ঘটে। পরিবেশকে অস্বীকার করে ব্যক্তিমানুষের একক প্রচেষ্টায় বিকাশ সম্ভব নয়। তিনি শিল্প বিপ্লবের গুরুত্ব স্বীকার করেও বলেন এটি শ্রমিক শ্রেণীর পক্ষে অভিশাপ।

ওয়েনের মতে সমবায় আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের সংগঠিত করে সামাজিক শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন গোষ্ঠীবদ্ধ কমিউনিস্ট জীবন গড়ে তুলতে পারলে মানুষের মধ্যে শোষণ এবং অসাম্য পৃথিবী থেকে দূর হবে।

বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র

কাল মার্কস এবং ফ্রেডরিক এঙ্গেলস পার্টির ইশতেহার এর তৃতীয় অধ্যায়ে কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের সাথে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের পার্থক্য দেখিয়েছেন।মার্কস এবং ফ্রেডরিক এঙ্গেলস কাল্পনিক সমাজতন্ত্র বাদের অবস্থান গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন। কিন্তু মার্ক্স্ এবং এঙ্গেলসের চিন্তা যে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের সূচনা করেছিল তার সাথে কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট রয়ে যায়।

কাল্পনিক সমাজতন্ত্র বাদীরা সকলেই ভাববাদী দার্শনিক ছিলেন। কিন্তু বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের তাত্ত্বিক ভিত্তি ছিল ঐতিহাসিক বস্তুবাদ। অর্থাৎ পুঁজিবাদী সমাজ থেকে উদ্ভূত বস্তু মুখি বিশ্লেষণ ইতিহাসের গতি পক্ষকে বিশ্লেষণ করে। এটিই ছিল বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মূলধারা।

সমাজতন্ত্র একটি রাজনৈতিক ধারণা। ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক প্রয়োজনই ছিল বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের একমাত্র দৃষ্টিভঙ্গি। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ উৎপাদন পদ্ধতি ও উৎপাদনের বিভিন্ন বিভাগে বিশ্লেষণ এর দ্বারা সবকিছু ব্যাখ্যা করেছে। অন্যদিকে কাল্পনিক সমাজতন্ত্র বাদীরা সমাজ বলতে ইতিহাস নিরপেক্ষ একটি কল্পলোককে বুঝিয়েছেন।

About Surajit Sajjan 59 Articles
Surajit Sajjan M.A B.Ed Assistant Teacher (HS School)

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*