ভারতবর্ষে করোনা অতিমারিতে বিত্তবানদের নৈতিক দায়িত্ব

Spread the love

(COVID-19 affects different people in different ways. Most infected people will develop mild to moderate illness and recover without hospitalization. dont panic …Follow the Govt Instruction.)

প্রবন্ধটি লিখেছেন কৃষ্ণ সরকার
মোবাইল – ৬২৯৭৯৪৬১৮৬

এক শতাংশ ধনীর কাছে দেশের 71 শতাংশ সম্পদ জমা হয়েছে।

ভারতের মতো দেশে যেখানে এক শতাংশ ধনীর কাছে দেশের 71 শতাংশ সম্পদ জমা হয়েছে। এই করোনা অতিমারিতে যখন দেশের আপামর জনসাধারণের আয় প্রায় শুণ্যের ঘরে পৌছাচ্ছে সেখানে কিছু লোকের সম্পদ বাড়তে বাড়তে তারা টাকার পাহাড় বানিয়েছে।

ভারতের মতো দেশে যেখানে প্রতিদিন 20 কোটি 30 লক্ষ লোক ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটায়, যেখানে বিশ্বের তিন ভাগের এক ভাগ গরিব লোক বাস করে, যেখানে প্রতিদিন 7 হাজার লোক অনাহারে, 10 হাজার লোক বিনা চিকিৎসায় এবং 3 হাজার শিশু অপুষ্টিতে মারা যায়, যে দেশে প্রায় 70 কোটি লোক বেকার সে দেশে এই করোনা অতিমারিতে বিত্তবানদের নৈতিক দায়িত্ব নির্ধারণ করাটাও একটা কঠিন কাজ।

বিশেষত যখন ভারতে ঢালাও মদের লাইসেন্স, পর্ণগ্রাফি, অশ্লীল পত্র-পত্রিকার দ্বারা দেশের নৈতিক মেরুদন্ডটাকেই ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে তখন বিত্তবানদের নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে নিবন্ধ রচনা করাটা আরও সংকটজনক হয়ে পড়ে।

ভারতে বিত্তবানদের নৈতিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অনেক বছর আগের বিবেকানন্দ বলেছিলেন-

ভারতে বিত্তবানদের নৈতিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অনেক বছর আগের বিবেকানন্দ বলেছিলেন- ”লক্ষ লক্ষ দরিদ্র, নিষ্পেষিত নরনারীর বুকের রক্ত দ্বারা অর্জিত অর্থে শিক্ষালাভ করে।যারা বিলাসিতায় আকন্ঠ নিমজ্জিত থেকে ওই দরিদ্রদের কথা একটিবার চিন্তা করার অবসর পায় না- তাদের আমি বিশ্বাসঘাতক বলি।

যতদিন ভারতের কোটি কোটি মানুষ অজ্ঞানে ডুবে থাকবে, ততদিন তাদের পয়সায় নিশ্চিন্ত অথচ তাদের দিকে ফিরেও তাকায় না- এমন প্রতিটা লোককেই আমি দেশদ্রোহী মনে করি।”

ভারতের রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল-নার্সিংহোম, আকাশছোয়া অট্টালিকা থেকে শুরু যা কিছু আজ বিত্তবানরা ভোগ করছে তার সবই ওই কোটি কোটি লোকের শ্রমের দ্বারা তৈরী। তাই করোনা অতিমারিতে বিত্তবানদের প্রধান নৈতিক দায়িত্ব তারা যেন সভ্যতার শ্রষ্টা ওই সব লোকের পাশে এখন দাঁড়ায়। বিবেকানন্দের ভাষায় বলতে হয় যতক্ষণ ভারতের একটা কুকুরও না খেয়ে থাকবে ততক্ষণ বিত্তবানদের কর্তব্য তার খাওয়ার ব্যবস্থা করা।

নতুবা বিদ্যাসাগরের মতো বলতেই হয়-

নতুবা বিদ্যাসাগরের মতো বলতেই হয়- গরীবের দুঃখ কয়জন দেখিয়াছে, তাহাদের হৃদয়ের কথা কয়জন বুঝিয়াছে? এই করোনা অতিমারিতে এখন সময় এসেছে প্রতিটা বিত্তবানদের তাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করার। বিখ্যাত বলিউড অভিনেতা সোনু সুড যা করে দেখাচ্ছেন। প্রতিটা বিত্তবানদের উচিত সামর্থ অনুসারে দরিদ্রদের জন্য অন্ন,বস্ত্র,চিকিৎসা ইত্যাদির সংস্থান করা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও দরিদ্রদের প্রতি সমাজের বিত্তবানদের নৈতিক অবহেলা দেখে বলেছিলেন –

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও দরিদ্রদের প্রতি সমাজের বিত্তবানদের নৈতিক অবহেলা দেখে বলেছিলেন -”চিরকাল মানুষের সভ্যতায় একদল অখ্যাত লোক থাকে, তারাই সংখ্যায় বেশি।…..দেশেরে সম্পদের উচ্ছিষ্টে তারা পালিত। তারা সব চেয়ে কম খেয়ে, কম পরে, কম শিখে বাকি সকলের পরিচর্যা করে। তারা রোগে মরে, উপবাসে মরে।”

তাই এই করোনা অতিমারিতে যখন সেই সব লোকের অবস্থা আরও চরমে পৌছেছে তখন বিত্তবানরা শুধু কিছু টাকা দান করেই তাদের নৈতিক দায়িত্ব শেষ করতে চাইবে? না। এখন বিত্তবানদের উচিত শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ডাকে সারা দিয়ে মানুষের পাশে মানুষ হিসাবে দাঁড়ানো। শুধু নৈতিক দায়িত্ব থেকে নয়, এটা এখন সময়ের দাবী।

অবশেষে

অবশেষে বিত্তবানদের নৈতিক দায়িত্ব সম্পর্কে বলতে গেলে ভূপেন হাজারিকার সুরেই বলতে হয়-
”মানুষ মানুষের জন্যে,
জীবন জীবনের জন্যে,
একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না? ও বন্ধু।।।

তথ্যসুত্রঃ
1) রবীন্দ্রনাথ ও বর্তমান সাংস্কৃতিক আন্দোলণ– শিবদাস ঘোষ।
2) অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করার মধ্যেই রয়েছে মনুষ্যত্ব ও আত্মমর্যাদার প্রকাশ– প্রভাষ ঘোষ।
3) জনস্বার্থে নির্বাচনকে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে– প্রভাষ ঘোষ।

About Surajit Sajjan 59 Articles
Surajit Sajjan M.A B.Ed Assistant Teacher (HS School)

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*