তর্কসংগ্রহ Tarkasangraha

Spread the love

‘তর্কসংগ্রহ’ অনুসারে বুদ্ধির লক্ষণ বিচার করো।

WEST BENGAL SSC MOCK TEST

অন্নংভট্ট তর্কসংগ্রহ গ্রন্থে বুদ্ধি বা জ্ঞানের লক্ষণ দিতে গিয়ে বলেন “সর্বব্যবহারহেতু:গুণ:বুদ্ধি:জ্ঞানম:” অর্থাৎ যে পদার্থ সমস্ত প্রকার ব্যবহারের প্রতি কারণ, সেই গুন স্বরূপ পদার্থটি হল বুদ্ধি বা জ্ঞান।

উপরিউক্ত বুদ্ধির লক্ষণ থেকে বলা যায় যে, ন্যায় মতে বুদ্ধি একপ্রকার গুন। তবে এই গুন কোন জড়দ্রব্যের গুন নয়। এটি হল আত্মা নামক চেতন দ্রব্যের ধর্ম। সুতরাং জ্ঞান বা বুদ্ধির হলো আত্মার এক বিশেষ গুন।


এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য ,সাংখ্য মতে বুদ্ধি ও জ্ঞান অভিন্ন হতে পারে না। কারণ বুদ্ধি অচেতন প্রকৃতি হতে উদ্ভূত প্রথম তত্ত্ব। কিন্তু অন্নংভট্ট ন্যায় দর্শন প্রণেতা মহর্ষি গৌতম কে অনুসরণ করে বুদ্ধি ও জ্ঞানকে অভিন্ন বলেছেন।

মহর্ষি গৌতম বলেছেন,”বুদ্ধি: উপলব্ধি: জ্ঞানম: ইতি অনর্থান্তরম।” অর্থাৎ বুদ্ধি ,উপলব্ধি, জ্ঞান,এই শব্দগুলি ভিন্নার্থক নয়। তারা একই পদার্থকে বোঝায়। জ্ঞান আত্মা নামক দ্রব্যের গুন। তাই জ্ঞান গুন পদার্থের অন্তর্ভুক্ত। বুদ্ধি ও জ্ঞান অভিন্ন।


জ্ঞান বা বুদ্ধি হল সকল প্রকার বাক্য ব্যবহারের প্রতি হেতু। এখানে সকল প্রকার ব্যবহার বলতে গ্রহণ-বর্জন-উপেক্ষা-শব্দ প্রয়োগ প্রভৃতি ব্যবহারকে বোঝানো হয়েছে।এই উপেক্ষাদি ব্যবহার কোন না কোন পদার্থকে বিষয় করেই হয়ে থাকে।

হেতু শব্দের দ্বারা অসাধারণ কারণ কে বোঝানো হয়। তাই বলা যায় উপেক্ষা, শব্দপ্রয়োগ আদি ব্যবহারের অসাধারণ কারণ হলো বুদ্ধি বা জ্ঞান। এখানে উল্লেখ্য যে তর্কসংগ্রহ এ ব্যবহৃত ‘ব্যবহার’ শব্দটিকে টীকাকারগণ শুধু শব্দ প্রয়োগ ব্যবহার অর্থেই প্রয়োগ করেছেন।

‘গুন’ শব্দের প্রয়োজনীয়তা


‘গুন’ শব্দের প্রয়োজনীয়তা:- তর্কসংগ্রহ গ্রন্থে উল্লেখিত বুদ্ধির লক্ষণে বিভিন্ন শব্দ গুলির প্রয়োজন ব্যাখ্যা করে বলেন যে, বুদ্ধির লক্ষনে যদি গুন শব্দটি না থাকত (“সর্বব্যবহার হেতু: বুদ্ধি: জ্ঞানম:”) তাহলে আকাশ, কাল ,প্রভৃতি পদার্থে লক্ষন টি অতিব্যাপ্তি হত। যেহেতু আকাশ কাল দিক প্রভৃতি কার্য্য মাত্রের প্রতি হেতু। কিন্তু ‘গুন’ শব্দটি থাকায় এই অতিব্যাপ্তি হয় না। কারন আকাশ কাল প্রভৃতি গুণ নয়। তাই অন্নংভট্ট দীপিকায় বলেছেন, “কালাদৌ অতিব্যাপ্তি বারণায় গুন: ইতি “।

সর্বব্যবহারহেতু: শব্দের প্রয়োজনীয়তা


সর্বব্যবহারহেতু: শব্দের প্রয়োজনীয়তা আ:-রুপাদিতে অতিব্যাপ্তি বারণের জন্য “সর্বব্যবহারহেতু:” এই পদ দেওয়া হয়েছে। রূপ প্রভৃতি গুন হলেও এগুলি সমস্ত প্রকার ব্যবহারের প্রতি অসাধারণ কারণ নয়। তাই অন্নংভট্ট দীপিকা টিকায় বলেছেন,”রূপাদৌ অতিব্যাপ্তি বারণায় সর্বব্যবহারহেতু: ইতি।


অতএব তর্কসংগ্রহ এ বুদ্ধির লক্ষণ এ ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দের আবশ্যিকতা অবশ্য স্বীকার্য।
দীপিকা টীকায় বুদ্ধির লক্ষন টির সংস্করণ:-অন্নংভট্ট বুদ্ধির যে লক্ষণ প্রদান করেছেন তর্কসংগ্রহে তা যথার্থ বলে মনে হয় না। এই লক্ষণ এর দ্বারা সমস্ত প্রকারের জ্ঞান ব্যাখ্যা করা যায় না। নির্বিকল্পক জ্ঞান কোন ব্যবহারের হেতু হয় না। অথচ ন্যায় মতে নির্বিকল্পক জ্ঞান একপ্রকার যথার্থ জ্ঞান। নির্বিকল্পক জ্ঞানে উপরিউক্ত বুদ্ধির লক্ষণের অব্যাপ্তি হয়।


এই আশঙ্কাতেই অন্নংভট্ট দীপিকা টীকায় বুদ্ধির লক্ষণ এর সংস্কার করে বলেন যে, “জ্ঞানত্ব” জাতিই জ্ঞান এর লক্ষণ। “জানামি ইতি অনুব্যবসায় গম্য জ্ঞানত্ব্ম” অর্থাৎ আমি জানি যে এই অনুব্যবসায়ে যে জ্ঞানত্ব প্রকাশিত হয়, সেই জ্ঞানত্বই জ্ঞান এর লক্ষন।

জ্ঞানত্ব কে জ্ঞানের লক্ষণ বললে বুঝতে হবে যে জ্ঞানত্ব এর আশ্রয় হলো জ্ঞান। জ্ঞানত্ব যেখানে থাকে না তাকে জ্ঞান বলা যায় না। জ্ঞানত্ব জাতির অস্তিত্বের প্রমাণ দেখানোর জন্য অন্নংভট্ট বলেছেন যে,”জানামি ইতি অনুব্যবসায় গম্য জ্ঞানত্ব্ম” আমি জানিতেছি এই আন্তর প্রত্যক্ষে জ্ঞানত্ব জাতি প্রকাশিত হয়।


এখানে উল্লেখ্য যে অন্নংভট্ট ‘তর্কসংগ্রহ’এ জ্ঞানের ব্যাখ্যা দিয়েছেন মাত্র। সর্বব্যবহারহেতু: জ্ঞানের লক্ষণ নয়। “জ্ঞানত্ব জাতির আশ্রয় হল জ্ঞান” – এটিই জ্ঞানের প্রকৃত লক্ষণ।

SSC MOCK TEST

BA Philosophy Hons Burdwan University Kolkata University

About Surajit Sajjan 59 Articles
Surajit Sajjan M.A B.Ed Assistant Teacher (HS School)

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*