কর্মকর্তব্যবাদ
প্রথাগত নৈতিকতার বিরুদ্ধে আরও একটি চরম প্রতিবাদ হল কর্মকর্তব্যবাদ। আত্মবাদ এবং অন্যান্য উদ্দেশ্যমূলক তত্ত্বের বিপরীতে এই প্রতিবাদ কর্তব্যবাদের দিকে অগ্রসর হয়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল যে বিশেষ ক্ষেত্রে কোন্টা ঠিক বা ঠিক নয়, তা স্থির, করবার কোনও আদর্শ পাওয়া যায় না।
এই নীতি আমাদের বলে যে, বিশেষ অবধারণগুলি মৌল, সঠিক নিয়মগুলি সেগুলি থেকে উৎপন্ন হবে, বিপরীতটা হবে না।
কোন্টা ঠিক তা নির্ণয় করবার একটি পদ্ধতি এতে দেওয়া হয়, তথ্যগুলিকে স্পষ্টভাবে জেনে তা করা হয়, এবং তারপরে কি করা হবে সে সম্বন্ধে একটা নিয়ম করা হয়। স্বজ্ঞাবাদীরা যেরকম বলে সেই রকম “স্বজ্ঞা” সাহায্যে তা করা হয় কিংবা অস্তিবাদী যেরকম “সিদ্ধান্তের কথা বলে, সেভাবেও হতে পারে।
কর্ম-কর্তব্যবাদীরা আমাদের কোনও মানদণ্ড বা অনুসরণ করার মতো কোনও নীতি দেন তাঁরা যে নিয়মগুলি দেন, সেগুলি যেন আদেশের মতো।
আমাদের যদি আলাদা কোনও বৃত্তি থাকত যা ভাল বা মদকে প্রত্যক্ষ করতে পারে এবং স্পষ্টভাবে সেগুলিকে তুলে ধরতে পারে, অনেক কিছু সহনীয় হত। কিন্তু নৃতাত্ত্বিক এবং মনস্তাত্ত্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ এরকম বৃত্তির বিরুদ্ধে যায়, ভাল বা মন্দ সম্বন্ধে আমাদের রোজকার মতপার্থক্যও তা সমর্থন করে না।
তাছাড়া, ষষ্ঠ অধ্যায়ে আমরা দেখতে পাব, স্বঙ্গাবাদে আরও অনেক অসুবিধা আছে। অতএব, যদি সম্ভব হয়, আমাদের আরও সন্তোষজনক তত্ত্ব সন্ধান করা দরকার।
আবার যে কম-কর্তব্যবাদ
আবার যে কম-কর্তব্যবাদ, যা “সিদ্ধান্ত”কে “স্বজ্ঞা” অপেক্ষা মুখ্য মনে করে, তা আরও কম সন্তোষজনক। এতে আমাদের বিশেষ অবধারণগুলিকে যেন শূন্যে নিক্ষেপ করা হয়, অস্তিবাদীরা এরকম মনে করে।
সেগুলি আমাদের “উদ্বেগ সৃষ্টি করে, তার তাই নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করে। এই মতবাদ যে “পরিস্থিতি”-তে একজন আছে, তাই পথপ্রদর্শক হিসাবে মনে করে। এর অর্থ হল ব্যক্তিকে সতর্কভাবে দেখতে হবে। কিন্তু তার
বাইরে এর আর কিছু বলার নেই। এরকম কথার জোর দিয়ে বলা হয় যে, আর কোনও কিন্তু কতিকে পথ দেখাতে পারে না ব্যক্তিকে শুধু “নির্বাচন করতে হবে অথবা কি করতে হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কাজটা নির্বাচন করেই তা ঠিক হবে, এটা বলতে হবে। আসলে, এ থেকে আমরা কোনও পথের খোঁজ পাই না, শুধু তথ্যগুলির পর্যবেক্ষণ আমাদের কি করতে হবে বলে না, যদি না আমাদের কোনও লক্ষ্য, উদ্দেশ্য বা আদর্শ থাকে।
শুধু একটা গাড়ি আসছে এটা জেনে আমি কিছু করতে পারি না যদি না আমি রাস্তা পার হতে চাই, কিংবা আমি কি করব সে সম্বন্ধে আমার যদি কিছু ধারণা। না থাকে। এগুলির ভিত্তিতে কি করে আদেশ গড়ে তোলা যায়, সে সম্বন্ধে আমাদের বিস্ময় জাগতে পারে।
কর্ম-কর্তব্যবাদের প্রধান যুক্তি
কর্ম-কর্তব্যবাদের প্রধান যুক্তি, আগে প্রচলিত নিয়মের বিরুদ্ধে যেসব আপত্তি দেওয়া হয়েছিল সেগুলি বাদ দিলে, হল একটা দাবি যে প্রত্যেক পরিস্থিতি আলাদা। এমন কি, তা অভিনব, তাই কোনও সাধারণ নিয়ম তার মোকাবিলা করতে যথেষ্ট নয়, তা কেবল আদেশ হিসাবে কাজ করতে পারে।
এখন, একথা সত্য যে, প্রত্যেক পরিস্থিতির কিছু নতুনত্ব আছে, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তা সব দিক দিয়ে নতুন কিংবা অন্য কোনও পরিস্থিতির সঙ্গে ভাব প্রাসঙ্গিক নৈতিক অংশে মিল থাকবে না।
আসলে, বলা যায়, ঘটনা এবং পরিস্থিতি প্রধান অংশগুলিতে এক, অন্যথায় তথ্য সম্বন্ধীয় সাধারণ উক্তিগুলি, যা আমরা সাধারণ জীবনে এবং বিজ্ঞানে করে থাকি, তা করতে পারতাম না। অতএব একথা ভাববার কোনও কারণ নেই যে, অনুরূপভাবে আমরা নীতিসম্বন্ধীয় সাধারণ উক্তি করতে পারি। অনেক পরিস্থিতিই এরকম যাদের মধ্যে আমরা মিল দেখাতে পাই এবং তাই এগুলির প্রতি নিয়মের প্রয়োগকে যথাযথ মনে করা যায়।
অন্যদিকে, কর্ম-কর্তববাদের বিরুদ্ধে দুরকম যুক্তি দেওয়া যেতে পারে।
প্রথমটি
কেবলমাত্র যেগুলি চরম তাদের প্রতি প্রয়োগ করা যায়, দ্বিতীয়টি, অন্য সবগুলির প্রতি প্রয়োগ করা যায়। প্রথমটি হল, আমাদের পক্ষে নিয়ম ছাড়া অন্য কোনও কাজ করা প্রায় অসম্ভব। একটা কারণ হল, প্রত্যেক পরিস্থিতিকে আলাদা করে বিচার করার সময় দিতে এবং পরিশ্রম করতে আমরা পারি না। আর একটি কারণ হল, নৈতিক শিক্ষাপদ্ধতিতে নিয়মের প্রয়োজন। আর. এম. হেয়ার বলেছেন,
“…কোনও কিছু করতে শেখা শুধু একটি কাজ করতে শেখা নয়; এটা সব সময় কোনও একধরনের পরিস্থিতিতে কোনও একধরনের কাজ করতে শেখা, এবং তা একটি নিয়মকে শেখা। নিয়ম ছাড়া আমরা কোনও কিছুই বড়দের কাছ থেকে শিখতে পারতাম না। প্রত্যেক প্রজন্মকে শুরু থেকে শিখতে হবে এবং নিজেকে শিক্ষিত করতে হবে। কিন্তু …স্বশিক্ষা সমস্ত শিক্ষার মতোই নিয়মগুলিকে আয়ত্ত করা।”
একজন কর্ম-কর্তববাদী উত্তর দিতে পারে যে
একজন কর্ম-কর্তববাদী উত্তর দিতে পারে যে, যে নিয়মগুলি দরকার সেগুলি অতীত অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া কিছু আদেশ। কিন্তু এর অর্থ হতে পারে অতীতে যে-সমস্ত নিয়ম
জ্ঞান বা সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পাওয়া যেতে পারে, সেগুলি তাই। এবং এসবের ভিত্তিে যে সার্বিকীকরণ করা হয়, সে সম্বন্ধে প্রশ্ন করা যায়। যে কোনও দিক দিয়েই ে স্পষ্ট মনে হয় যে নৈতিক শিক্ষার নিয়মগুলি নতুন প্রজন্মের কাছে আদেশের চেয়ে জোরালো কিছু বলে গৃহীত হতে হবে, যা তারা তাদের বিবেচনায় গ্রহণ বা গ্রহণ নাও করতে পারে। আপাতঃদৃষ্টিতে সেগুলি কওঁবোর নিয়ম বলে মনে হবে। ডাবলু. ডি. রসের প্রসঙ্গে আলোচনা করব।
অন্য যুক্তিধারাটি আরও বেশি বিমূর্ত। তাই যুক্তি অনুযায়ী বিশেষ নৈতিক অবধারণগুলি কর্ম-কর্ডবাবাণীরা যেরকম মনে করে, সেরকম বিশেষ নয়, সেগুলি অব্যভাবে সাধারণ। কর্ম-কর্তবাবাদীর মতে “ক-এর এই পরিস্থিতিতে এরকম করা উচিত”, তা থেকে আমরা এরকম কিছু পাই না যে -এর বা অন্য কারও অনুরূপ কি করা উচিত।
ধরা যাক, আমি রামের কাছে পরিস্থিতি চ-তে কি করব সে অঙ্গে পরামর্শ চাইতে গেলাম, এবং সে আমাকে বলল, নৈতিক দিক দিয়ে আমার করা Gse আমার সে সময় মনে পড়তে পারে যে আগের দিন রাম শ্যামকে অনুরূপ পরিস্থিতিতে যা করা উচিত বলেছিল। আমি তখন তাকে একথা বলতে পারি এবং জানতে চাইতে পারি, তার কি হচ্ছে না। ভাবা যাক যে দুটো ঘটনা যে আলাদা, এটা দেখানোর কোনও চেI নাম করে না, শুধু বলে, “না, দুটো ঘটনার মধ্যে কোনও মিল নেই। এটা ঠিক, ঘটনা দুটো অনেকটা এক রকম, তবে একটা কাল ছিল এবং তাতে শ্যাম জড়িত ছিল।
এটা আজকে ঘটেছে এবং তুমি এতে জড়িত।” নিশ্চয়ই, যিনি নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে কথা বলছেন অথবা যিনি নৈতিক উপদেশ দিচ্ছেন, তাঁর কাছে। থেকে এরকম উত্তর আমাসের অদ্ভুত মনে হবে। আসল ব্যাপারটা হল এই যে, কেউ যদি একটি পরিস্থিতিতে কোনও নৈতিক অবধানাণ করে, তাহলে অনুরূপ পরিস্থিতিতে একই ধরনের অবধারণ করার দায়িত্ব অব্যক্তভাবে মেনে নেয়, পরিস্থিতি দুটি বিভিন্ন সময়ের অথবা বিভিন্ন স্থানের হতে পারে অথবা বিভিন্ন বাক্তি জড়িত থাকতে পারে। নৈতিক এবং মূল্যগত বিরোধগুলি এমন যে, সেগুলি যদি কোনও কাজ বা বস্তুর সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে যে কাজ বা বস্তুর একই বৈশিষ্ট্য আছে সেগুলির সঙ্গেও যুক্ত হবে।
আমার দেশের কাজ করা উচিত
আমি যদি বলি, আমার দেশের কাজ করা উচিত, তাহলে আমি বলতে চাই, অন্য সকলের তাই করা উচিত। এখানে যে বিষয়টি জড়িত হয়েছে তা হল সার্বিকীকরণের নিয়ম।
কেউ যদি অবধারণ করে যে, বা ভাল অথবা ঠিক, তাহলে তার এরকম অবধারণের দায়বদ্ধতা আছে যে, যা ক-এর মতো কিংবা প্রাসঙ্গিক দিক দিয়ে ক-এর সদৃশ, তাই ঠিক অথবা ভাল। তা নাহলে তার একথাগুলি ব্যবহার করা অর্থহীন।
এই বিষয়টি আগে উল্লিখিত একটি ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তা হল বিশেষ নৈতিক এবং মূল্য অবধারণকে যুক্তি দিয়ে সমর্থন করা যেতে পারে। রাম যদি এরকম অবধারণ করে, তাহলে একথা জিজ্ঞাসা করা যুক্তিযুক্ত হবে কাজটা যে ভাল বা জিনিষটি ভাল, একথা বিশ্বাস করার তার কি যুক্তি আছে। আমরা এরকম উত্তর আশা করি “কারণ তুমি এটা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে” অথবা “এটা আনন্দ দেয়।” সে যদি বলে “কোনও কারণ
নেই”, আমরা ধাঁধায় পড়ে যাই এবং অনুভব করি যে নৈতিক বলে “কোনও কারণ নেই”, আমরা ধাঁধায় পড়ে যাই এবং অনুভব করি যে নৈতিক অথবা মূল্য শব্দ নিয়ে সে আমাদের বিভ্রান্ত করেছে। নৈতিক এবং মূল্য অবধারণের যুক্তি আছে এবং যুক্তি কেবল বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হয় না।
যদি একটি ক্ষেত্রে সেগুলি প্রযুক্ত হয়, তাহলে অনুরূপ সব ক্ষেত্রেই সেগুলি প্রয়োগ করা যাবে। তাছাড়া একটি বিশেষ ক্ষেত্রে যুক্তি দিতে গেলে আমাদের একটি সাধারণ বচন মেনে নিতে হয়। রাম যদি আমার “কেন” প্রশ্নের একথা বলে উত্তর দেয় “কারণ তুমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে” অথবা “এতে আনন্দ পাওয়া যায়”, সে এটা ধরে নিচ্ছে যে, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা উচিত অথবা যা আনন্দ দেয়, তাই ভাল।
Leave a Reply